Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

হাইব্রিড সবজির বীজ উৎপাদন

অধিক ফলন, আকর্ষণীয় চেহারা, স্বল্প জীবনকাল, বিভিন্ন পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা, রোগ ও পোকার অধিক সহনশীলতা, প্রায় একই সময়ে পরিণত হওয়া, বাজারে অধিক চাহিদা, পুষ্টিকর ইত্যাদি নানাবিধ কারণে বর্তমানে হাইব্রিড সবজি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কিন্তু সমস্যা হলো, বাজারে হাইব্রিড বীজের দাম সাধারণ বীজের চেয়ে অনেক বেশি। আবার যে কোনো কৃষক চাইলেও সাধারণ সবজি বীজের মতো হাইব্রিড বীজ উৎপাদন করতে পারেন না। হাইব্রিড বীজ উৎপাদন করতে গেলে বিশেষ দক্ষতা দরকার। তবে তা যে খুব কঠিন কিছু তা নয়। এর জন্য দরকার বিশেষ জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা ও ধৈর্য। হাইব্রিড সবজির বীজ উৎপাদনকারীকে অবশ্যই তিনটি বিষয় সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। বিষয় তিনটি হলো- হাইব্রিড বীজ উৎপাদনের মূলনীতি, তথা সবজির বংশগত ও কৃষিতাত্ত্বিক কিছু বিষয় সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞান।


যে সবজির হাইব্রিড বীজ উৎপাদন করতে হবে তার উদ্ভিদতত্ত্ব বিশেষ করে কখন ফুল ফোটে, কতক্ষণ গর্ভমুণ্ডের পরাগগ্রহীতা বজায় থাকে, পরাগধানীর বিদারণ কখন ঘটে ইত্যাদি।
 

এরপর জানতে হবে হাইব্রিড বীজ উৎপাদনের কলা কৌশল, বিশেষ করে ইমাসকুলেশন বা ফুলের পরাগধানী অপসারণ, পরাগরেণু সংগ্রহ, পরাগায়ন বা সংকরায়ন পদ্ধতি ইত্যাদি। পরের দিন ফুটবে এমন ফুলের কুঁড়ির বৃতি উন্মোচন করে তার ভেতর থেকে চিমটা দিয়ে সাবধানে পরাগধানী অপসারণ করা হয়। এটাই ইমাসকুলেশন। এটা অনেকটা খাসি করার মতো ঘটনা। এরপর কাক্সিক্ষত বৈশিষ্ট্যের ফুল থেকে পরাগরেণু সংগ্রহ করা হয়। ফুল ফোটার দিন এ কাজ করা হয়। সংগৃহীত পরাগরেণু একটি স্বচ্ছ খামে রাখা হয়। এরপর পরাগরেণু ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ২৪ ঘণ্টা শুকানো হয়। এরপর এই রেণু সদ্য ফোটা স্ত্রী ফুলের গর্ভমুণ্ডে স্থাপন করা হয়। একে বলে হাত পরাগায়ন। বেশির ভাগ হাইব্রিড সবজি বীজ উৎপাদন করা হয় হাত পরাগায়নের মাধ্যমে। এখনো পর্যন্ত হাত দ্বারা সংকরায়ন করা বহুল প্রচলিত। যদিও এতে সময় ও শ্রম বেশি লাগে। পাশাপাশি বাণিজ্যিকভিত্তিতে প্রচুর পরিমাণে হাইব্রিড বীজ উৎপাদনের জন্য এখন বিশেষ কিছু পদ্ধতির আশ্রয় নেয়া হচ্ছে। যেমন পুং বন্ধ্যাত্ব ও ফুলে স্ব অসামঞ্জস্যতা সৃষ্টি। বেশ কিছু জটিল প্রক্রিয়া দ্বারা এ ধরনের কাজ করা হয়। বাণিজ্যিকভিত্তিতে হাইব্রিড বীজ উৎপাদনে ব্যবহৃত কৌশলগুলো নিচের তালিকায় উল্লেখ করা হলো-

কৌশল বাণিজ্যিকভাবে যেসব সবজির জন্য ব্যবহৃত হয়                        
হাতে পরাগধানী অপসারণ বা ইমাসকুলেশন + হাতে পরাগায়ন টমেটো, বেগুন, ঢেঁড়স, ক্যাপসিকাম, মরিচ ইত্যাদি
পুরুষ ফুল অপসারণ + হাতে পরাগায়ন করলা, লাউ, মিষ্টিকুমড়া, শসা এসব                        
পুং বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি + হাতে পরাগায়ন টমেটো, মরিচ, ক্যাপসিকাম
পুং বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি + প্রাকৃতিক পরাগায়ন বাঁধাকপি, ব্রোকলি, ফুলকপি, গাজর, পিয়াজ, মরিচ
স্ব অসামঞ্জস্যতা + প্রাকৃতিক পরাগায়ন বাঁধাকপি, ব্রোকলি, ফুলকপি
পুরুষ ফুল অপসারণ + প্রাকৃতিক পরাগায়ন করলা, স্কোয়াশ


যেসব সবজির বাজারে তুলনামূলকভাবে দাম ও চাহিদা বেশি ও যেসব সবজি অধিক মাত্রায় হেটেরোসিস বা কৌলিতাত্ত্বিক বৈষম্য প্রদর্শন করে যেমন বেগুন পরিবারের সবজি (বেগুন, টমেটো, মরিচ), কুমড়া পরিবারের সবজি (শসা, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, করলা, স্কোয়াশ), কপি পরিবারের সবজি (ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি), কন্দজাতীয় সবজি (মুলা, গাজর, পিয়াজ), ফল জাতীয় সবজি  ঢেঁড়স) ইত্যাদি সবজির হাইব্রিড বীজ উৎপাদন করা হয়। কয়েকটি সবজির হাইব্রিড বীজ উৎপাদন কৌশল নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।
 

টমেটোর হাইব্রিড বীজ উৎপাদন
টমেটো সবজিতে ফলন, পরিপক্বতার সময়, রঙ ও আকার, গাছের তেজ, প্রতিকূল পরিবেশে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে হেটেরোসিস বা বৈষম্য বেশ দেখা যায়। শুধু ফলনের বেলাতেই ৩০-৫০% হেটোরোসিসের ঘটনা ঘটে। এই বৈষম্য কমানোর জন্য টমেটোর হাইব্রিড বীজ উৎপাদন করা প্রয়োজন। এতে ফলন অনেক বাড়ে। বাণিজ্যিকভিত্তিতে টমেটোর হাইব্রিড বীজ উৎপাদনের জন্য স্ত্রী ফুল থেকে পরাগধানী বা পুংকেশর সরানো ও হাতে পরাগায়নের মাধ্যমে হাইব্রিড বীজ উৎপাদনকে এখনো সবচেয়ে উপযুক্ত, ব্যয়সাশ্রয়ী ও কার্যকর বলে মনে করা হয়। অধিকাংশ বীজ কোম্পানি এ পদ্ধতিতে টমেটোর হাইব্রিড বীজ উৎপাদন করে থাকে। দুই ধরনের টমেটো গাছ আছে। এক ধরনের টমেটো গাছ অবিরামভাবে লম্বা হতে থাকে। এসব গাছকে বলা হয় অবিরত গাছ বা ইনডিটারমিনেট টাইপ। আর এক ধরনের গাছ আছে যার বৃদ্ধি সীমিত, একটি নির্দিষ্ট উচ্চতা পর্যন্ত গাছ লম্বা হয়। এসব গাছকে বলে সবিরত বা ডিটারমিনেট টাইপের গাছ। অবিরত গাছের ক্ষেত্রে হাইব্রিড বীজ উৎপাদন করতে হলে গাছের ডালপালা ছেঁটে একটি নির্দিষ্ট অবস্থায় রাখতে হবে। এ ধরনের গাছের ক্ষেত্রে সাধারণত গাছে একটি বা দুটি ডাল রাখা হয়। সবিরত গাছের বেলায় রাখা হয় তিনটি ডাল। প্রতিটি ডালের প্রথম থেকে চতুর্থ থোকার ফুল পর্যন্ত সাধারণত হাইব্রিড বীজের ইমাসকুলেশন করার জন্য নির্বাচন করা হয়। এসব থোকার যেসব ফুল পরদিন ফুটবে সেসব ফুলের পুংকেশর বা পরাগধানী চিমটা দিয়ে সরিয়ে ফেলা হয়। ইমাসকুলেশন করার সঠিক অবস্থা বুঝার জন্য কুঁড়িটি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যেসব কুঁড়ির বৃতিগুলো পুরোপুরি খোলেনি, পুষ্পাক্ষ বরাবর প্রায় ৪৫ ডিগ্রি  কোণ করে অবস্থান করছে  সেগুলো নির্বাচন করতে হবে। এরূপ কুঁড়ির গোড়ায় ধরে একটি একটি করে সাবধানে পাঁপড়ি অক্ষত রেখে চিমটা দিয়ে ধীরে ধীরে খুলে ভেতর থেকে সবগুলো পরাগধানী সরিয়ে ফেলতে হবে। পরদিন এসব কুঁড়ির ফুল ফুটবে। তখন সেসব ফুলে কাক্সিক্ষত গাছ থেকে ভাইব্রেটর যন্ত্র দিয়ে সদ্য ফোটা ফুল থেকে পরিণত পরাগরেণু ঝাঁকিয়ে সংগ্রহ করতে হবে। পরাগধানী বিদারণের সময় ভাইব্রেটর দিয়ে রেণু সংগ্রহ করলে তার সজীবতা ও কার্যকারিতা থাকে সর্বোচ্ছ। ভাইব্রেটর দিয়ে পরাগরেণু সংগ্রহ করলে কেবল পরিণত পরাগরেণু ঝরে পড়ে। এরূপ পরাগরেণু কাঁচের নলে বা টেস্টটিউবে রাখা যায়। পাতলা প্লাস্টিকের খামে বা কাঁচের প্লেটেও রাখা যায়। এ পরাগরেণু স্ত্রী ফুলের গর্ভমুণ্ডে হাতের আঙুলে মাখিয়ে লাগিয়ে দিতে হবে। ব্রাশ দিয়েও লাগানো যায়। অবশিষ্ট রেণু ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য রাখা যাবে না। এতে রেণুর সজীবতা নষ্ট হয় বা কমে যায়। তবে শূন্য ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে পরাগরেণু শুকিয়ে প্রায় ২ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। তাতে সজীবতা নষ্ট হয় না। পরাগায়ন ঘটনোর পর সেসব ফুলের বৃতির ওপর থেকে অর্ধেক অংশ কেটে ফেলা হয় যাতে সংকরায়িত ফুলকে অপরাগায়িত বা অসংকরায়িত ফুল থেকে আলাদাভাবে পরে চেনা যায়। সাধারণত ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় পরাগরেণুর সজীবতা ও কার্যকারিতা ভালো থাকে। তাই দিনের তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিচে থাকলে সংকরায়ন করা উচিত। তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে পরাগরেণুর উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায় ও সংকরায়ন বিঘ্নিত হয়।


উপরোক্ত পদ্ধতিতে টমেটোর হাইব্রিড বীজ উৎপাদনে প্রচুর শ্রমিক ব্যয় হয়। মোট উৎপাদন খরচের প্রায় ৪০% ব্যয় হয় শুধু ইমাসকুলেশন করার কাজে। কাজেই এই খরচ কমানোর জন্য বর্তমানে বাণিজ্যিকভিত্তিতে টমেটোর হাইব্রিড বীজ উৎপাদনের জন্য পুং বন্ধ্যা লাইন সৃষ্টি করে সংকরায়ন করা হচ্ছে। জিন মিউটেশন করে পুং বন্ধ্যা লাইন সৃষ্টি করা হয়। এসব লাইনের গাছে ফুল ফোটে, তবে ফুলের পরাগরেণু হয় নিষ্ক্রিয়। ফলে ইমাসকুলেশন করতে হয় না। শুধু কাঙ্খিত ফুলের পরাগরেণু এনে পরাগায়ন ঘটাতে হয়। এতে ইমাসকুলেশন করার খরচ ও শ্রম বেঁচে যায়।


সংকরায়নের পর ধীরে ধীরে ফল গঠিত হয়। সুপরিণত বা ভালোভাবে পাকা ফল বীজের জন্য তুলতে হবে। তোলার পর সেসব টমেটো পচাতে বা গাজাতে হবে। উষ্ণ তাপমাত্রায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে টমেটোর গাজানো হয়, কিন্তু ২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় টমেটোর ফার্মেন্টেশন বা গাজানোয় ৪৮ ঘণ্টা সময় লাগবে। বেশিক্ষণ গাজালে বীজের রঙ বিবর্ণ হয়ে যাবে। হাইড্রোক্লোরিক এসিড বা সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড ব্যবহার করেও টমেটোর গাজানো কাজ করা যায়। সেক্ষেত্রে প্রতি ৪ কেজি টমেটোর জন্য ১০ সিসি পরিমাণ ৩৬% হাইড্রোক্লোরিক এসিড ও ৩০% সেডিয়াম হাইড্রোক্সাইড ব্যবহার করতে হবে। টমেটোকে কেটে টুকরা করে তার সাথে এই রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে ১৫ মিনিট রাখতে হবে। এতে টমেটো বীজের সাথে থাকা জেলির মতো আঠালো দ্রব্য আলাদা হয়ে যাবে। গাজানোর পর টমেটোকে কচলে বা চটকে বীজ পানিতে ধুয়ে আলাদা করতে হবে। এরপর বীজ শুকিয়ে নিতে হবে। সাধারণত ১ কেজি টমেটো থেকে ৩-৪ গ্রাম বা ১০০০-১২০০টি হাইব্রিড বীজ পাওয়া যায়। এ হিসেবে ১ হেক্টরে হাইব্রিড বীজ উৎপাদন হয় প্রায় ৬০-৭০ কেজি।


বেগুনের হাইব্রিড বীজ উৎপাদন
বেগুনের প্রায় ৫০-১৫০% হেটেরোসিস ঘটে। বাংলাদেশে রশিদ ও সঙ্গীরা (১৯৮৮) বেগুনে ৫০% হেটেরোসিসের ঘটনা ঘটে বলে তাদের এক গবেষণাপত্রে উল্লেখ করেছেন। এর ফলে বেগুনের জীবনকাল, গাছপ্রতি ফলের সংখ্যা, ফলের ওজন, ফুল ফোটার সময়, ফলন, আগাম পরিপক্বতা ইত্যাদির বেশ হেরফের ঘটে। হাইব্রিড বীজ উৎপাদনের মাধ্যমে এ প্রভাব কমানো যায়। বেগুনে সাধারণত ইমাসকুলেশন ও হাত পরাগায়ন ঘটিয়ে সংকরায়ন বা হাইব্রিডাইজেশন করা হয়। ফুল ফোটার বা পরাগধানী বিদারণের একদিন আগেই বেগুন ফুলের স্ত্রী অঙ্গের গর্ভমু- পরাগ গ্রহণের জন্য তৈরি হয়ে যায়। এজন্য ফুল ফোটার অপেক্ষা না করে ফোটার পূর্ব দিনেই ইমাসকুলেশন করে সাথে সাথে পরাগায়ন ঘটিয়ে সংকরায়নের কাজ করা যায়। ওই দিনেই কাক্সিক্ষত ফুলের পরাগরেণু ভাইব্রেটর দিয়ে সংগ্রহ করে এ কাজ সম্পন্ন করতে হয়। এতে ভালো ফল ও অধিক বীজ উৎপন্ন হয়। ইমাসকুলেশন করা ফুলে আর প্রাকৃতিক পরাগায়ন ঘটার সুযোগ ঘটে না। কেননা এসব ফুলে আর মৌমাছি বা বোলতারা বসে না।  


ভালো মানের বীজ ও উত্তম ফলনের জন্য যেসব গাছে সংকরায়ন করা হবে সেসব গাছ ছেঁটে নেয়া উচিত। গাছে প্রথম যে ফুলটি ফোটে সেটি ছেঁটে ফেলে দিতে হবে। দ্বিতীয় ফুলটিও তুলে ফেলতে হবে। এতে পরে অধিক ও ভালো ফুলের জন্ম হবে। এসব ফুল থেকে গঠিত ফলে অধিক সংখ্যক বীজ হবে। বীজের উত্তম ফলনের জন্য  বেগুন গাছের শাখা-প্রশাখাও ছাঁটা উচিত। প্রথম ফুল ফুটলে তা অপসারণের সময় সেই ফুলের অবস্থানের নিচে পাশাপাশি থাকা দুটি সেরা ডাল রেখে উপরের বাকি সব ডাল ছেঁটে দিতে হবে। এতে পরে গাছের বৃদ্ধি ভালো হবে।  বেগুন একটি আলোকসংবেদী ফসল। ভালো ফুল-ফল ধরা ও বৃদ্ধির জন্য দিনের তাপমাত্রা ২৫-৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড ও রাতের তাপমাত্রা ৮-১০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড উত্তম। এতে পরাগরেণুর কার্যকারিতা ভালো হয়।


কৌলিতাত্ত্বিক পুং বন্ধ্যা সারি সৃষ্টি করেও বেগুনের হাইব্রিড বীজ উৎপাদন করা যায়। তবে তা বাণিজ্যিকভিত্তিতে করা সফল নয়। এতে ফলধারণ কম হয়। সাধারণত ফুল ফোটার ৫০-৫৫ দিন পর পাকা বেগুন তোলা হয়। পরিণত হওয়ার পরও ভালোভাবে পাকার জন্য ১০ দিন গাছে বেগুন রেখে দেয়া হয়। বেগুন ভালোভাবে পেকে খোসা হলুদ হলে তা তোলা হয়। টমেটোর মতো বেগুনকে গাজানোর দরকার হয় না। তোলা বেগুন একদিন রেখে দিলে তা কুঁচকে নরম হয়ে যায়।  বেগুন না কেটে আস্ত বেগুনে হালকা মুগুর দিয়ে পেটালে ভেতরে শাঁসের মধ্যে থাকা বীজগুলো আলগা হয়ে যায়। তখন বেগুন চিরে বীজগুলো সংগ্রহ করতে হয়। বেগুনের কাটা টুকরোগুলো পানিতে ধুয়েও বীজ সংগ্রহ করা যায়। বীজ ২৮-৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় বাতাসে শুকিয়ে সংরক্ষণ করতে হয়। এক হেক্টরে ১৫০-২০০ কেজি হাইব্রিড বীজ পাওয়া যায়। বেগুনের প্রতি ১০০০ বীজের ওজন ৪-৫ গ্রাম।
মিষ্টিকুমড়ার হাইব্রিড বীজ উৎপাদন


কুমড়াগোত্রীয় সবজি গাছে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ফুল ফোটা দেখা যায়। এজন্য এর সংকরায়ন করতে গেলে সেসব গাছের ফুলের চরিত্র বিচার করে এ কাজ করতে হবে। প্রজাতি ও জাতের ওপর নির্ভর করে কুমড়াগোত্রী বিভিন্ন গাছে মোটামুটিভাবে তিন রকমের ফুল দেখা যায়- পুরুষ, স্ত্রী ও উভলিঙ্গী ফুল। লাউ, শসা, চালকুমড়া ইত্যাদি সবজির কিছু কিছু জাতের গাছে উভলিঙ্গী ফুল দেখা যায়। একটি গাছ কখনো কখনো এক ধরনের ফুল বহন করে, কখনো কখনো একাধিক রকমের ফুল বহন করে। যেসব গাছ মাত্র এক রকমের ফুল অর্থাৎ পুরুষ বা স্ত্রী ফুল ধারণ করে তাদের বলা হয় ভিন্নবাসী বা মনোসিয়াস গাছ, যেমন কাঁকরোল। যেসব গাছ পুরুষ ও স্ত্রী উভয় রকমের ফুল ধারণ করে তাদের বলে সহবাসী বা ডায়োসিয়াস গাছ, যেমন মিষ্টিকুমড়া। কিছু গাছে একই সাথে পুরুষ, স্ত্রী ও উভলিঙ্গী ফুল ফোটে। এদের বলা হয় ট্রাইমনোসিয়াস বা ত্রিবাসী গাছ। কুমড়াগোত্রীয় সবজির কোন গাছে কি ধরনের ফুল ফুটবে অর্থাৎ ফুলের লিঙ্গপ্রকাশ, গাছপ্রতি বিভিন্ন লিঙ্গের ফুলের সংখ্যা বা অনুপাত ইত্যাদি নির্ভর করে সে প্রজাতির গাছের জিন বৈশিষ্ট্য ও পরিবেশের ওপর। ফুলের এসব বৈশিষ্ট্যের ওপর পরিবেশের প্রভাবকে বিভিন্ন বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে প্রভাবিত করা যায়। গাছের ভেতরে থাকা বিভিন্ন হরমোন যেমন অক্সিন, জিবারেলিন, সাইটোকাইনিন, ইথিলিন, এবসিসিক এসিড ইত্যাদি ফুল ফোটার জন্য দায়ী। কিছু বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক বা হরমোন রয়েছে যারা স্ত্রী ফুল ফুটতে সাহায্য করে, কিছু সাহায্য করে পুরুষ ফুল ফুটতে। স্ত্রী ফুল ফুটতে সাহায্য করে অক্সিন, ইথিলিন (ইথেফোন বা ইথ্রেল), ম্যালিক হাইড্রাজাইড (MH), ট্রাই-আয়ডোবেঞ্জোয়িক এসিড (TIBA), সাইটোকাইনিন, বোরন ইত্যাদি। পুরুষ ফুল ফুটতে সাহায্য করে জিবারেলিন, সিলভার নাইট্রেট, সিলভার থায়োসালফেট ইত্যাদি। কাজেই এসব হরমোন প্রয়োগ করে গাছে কাক্সিক্ষত ফুলের সংখ্যা বাড়িয়ে নেয়া যায়।
 

ভিন্নবাসী ও সহবাসী ফুলে পর-পরাগায়ন ঘটার মাধ্যমে ফল গঠন হয়। কিন্তু উভলিঙ্গী ফুলের বেলায় স্ব পরাগায়নের মাধ্যমে ফল গঠনের নিয়ম থাকলেও তা সচরাচর ঘটে না। কেননা কুমড়াগোত্রীয় অধিকাংশ উভলিঙ্গী ফুলের পরাগরেণু আঠালো হওয়ায় তা গর্ভমুণ্ডে নিজে নিজে ঝরে পড়তে পারে না। পরাগায়নের এসব ভিন্নতার কারণে কুমড়াগোত্রীয় সবজির ফল ধারণের হার কম হয়। যতো ফুল ফোটে ততো ফল হয় না। তাই হাতে পরাগায়নের মাধ্যমে ফল ধারণের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি করা যায়। গাছে বেশি ফল থাকলে তাতে নতুন ফল ধরা কমে যায়। এজন্য খাওয়ার উপযুক্ত ফল সব সময় গাছ থেকে তুলে নিলে অধিক ফল ধরে।


মিষ্টি কুমড়াসহ কুমড়াগোত্রীয় অন্যান্য অধিকাংশ সবজির সহবাসী বৈশিষ্ট্যের কারণে পর পরাগায়ন ঘটে। এসব সবজির ইনব্রিড ডিপ্রেশন কম। কাঁকরোল ও পটোল সবজি দুটো ভিন্নবাসী হওয়ায় শতভাগ পর পরাগায়ন ঘটাতে হয়। এ দুটো সবজিতে প্রচুর ইনব্রিড ডিপ্রেশন দেখা যায়। এমনকি এক মৌসুমের পরই মূল জাতের বৈশিষ্ট্যের অনেক কিছু হারিয়ে যায়। এজন্য কুমড়াগোত্রীয় সবজির ইনব্রিড লাইন তৈরি করে তা থেকে কাক্সিক্ষত বৈশিষ্ট্যের পরাগরেণু সংগ্রহ করে সংকরায়ন ঘটানো কঠিন। পৃথক পৃথকভাবে এক একটি সবজি নিয়ে এজন্য কাজ করতে হয়। কুমড়াগোত্রীয় সবজির হাইব্রিড বীজ উৎপাদনের সাধারণ ধাপগুলো হলো-


ইনব্রিড লাইন সৃষ্টি করে তা দ্বারা ৩-৫ প্রজন্ম ইনব্রিডিং করা; হাইব্রিড উৎপাদন ক্ষমতা দেখে মাতৃ ইনব্রিড নির্বাচন করা; হাইব্রিড বীজ উৎপাদন করা; মাতৃইনব্রিডকে রক্ষণাবেক্ষণ করা।


মিষ্টিকুমড়ার ফুল খুব সকালে ফোটে ও পরাগরেণুর বিদারণ ও ঝরে পড়া সকালেই হয়। গর্ভমুণ্ডের পরাগগ্রহীতা বজায় থাকে দুপুর পর্যন্ত। মিষ্টি কুমড়ার হাইব্রিড বীজ উৎপাদন করতে হলে প্রথমে ইনব্রিড লাইন সৃষ্টি করতে হবে। শীতকালের ফসলের জন্য বীজ বোনা হয় নভেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে, গরমকালের ফসলের জন্য বীজ বুনতে হয় প্রথম বৃষ্টির পর। গাছ থেকে গাছ ও সারি থেকে সারির দূরত্ব দিতে হয় ১০.৬ মিটার। প্রতিটি গাছকে আলাদা মাচা তৈরি করে তাতে লতিয়ে দিতে হবে। একটি মাচা থেকে আর একটি মাচার মধ্যে ১ মিটার ফাঁক রাখতে হবে। পরাগধানী বিদারণের বা ফুল ফোটার একদিন আগে পুরুষ ও স্ত্রী কুঁড়িগুলোকে আলাদাভাবে ব্যাগিং করতে হবে। এমনকি পরাগায়ন ঘটানোর পরও ২ দিন এভাবে ব্যাগিং করে রাখতে হবে। এভাবে উপর্যুপরি ৪-৫ প্রজন্ম একাজ করে উপযুক্ত তেজ ও বৈশিষ্ট্যর ইনব্রিড লাইন খুঁজে নিতে হবে।


মিষ্টিকুমড়ার হাইব্রিড বীজ উৎপাদনের জন্য মাতৃ ইনব্রিড লাইনের স্ত্রী ও পুরুষ গাছ ৪ঃ১ অনুপাতে লাগাতে হবে। গাছের ২-৩ পাতা অবস্থায় সেসব গাছের গোড়ার গিঁটগুলোতে অধিক পরিমাণে স্ত্রী ফুল উৎপাদনের জন্য গাছে প্রতি লিটার পানিতে ৫০ থেকে ১০০ মিলিলিটার ইথেফোন গুলে স্প্রে করতে হবে। গাছকে মাচার উপর লতিয়ে দিতে হবে। প্রতিদিন বিকেলে ফুল ফোটার আগে প্রতিটি স্ত্রী ও পুরুষ ফুল ব্যাগিং করে ঢেকে দিতে হবে। স্ত্রী ফুলে কাক্সিক্ষত পরাগরেণু দিয়ে পরাগায়ন ঘটানোর পর পুনরায় ব্যাগিং করে দুদিন রেখে দিতে হবে। পরাগায়নের ৬০ দিন পর পাকা ফল সংগ্রহ করতে হবে। ফল বা কুমড়া কেটে ভেতর থেকে বীজ আলাদা করে পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে। এরপর সেসব বীজ নিম্ন তাপমাত্রায় (৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিচে) ৩-৪ দিন শুকাতে হবে। এরপর আবার ৩-৪ দিন রোদে শুকাতে হবে। বদ্ধ পলিপ্যাকেটে ৪-৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় বীজ সংরক্ষণ করতে হবে।

চাল কুমড়ার হাইব্রিড বীজ উৎপাদন
চালকুমড়ার ফুল ফোটে খুব ভোরে, ভোর ৩ থেকে ৫টার মধ্যে। ফুল ফোটার পরপরই গর্ভমু- পরাগ গ্রহণের জন্য তৈরি থাকে। তবে গর্ভমুণ্ডের পরাগগ্রহীতা বজায় থাকে ফুল ফোটার পর ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত। পরাগরেণুর সজীবতা থাকে পরাগধানী বিদারণের ২-৩ ঘণ্টা পূর্ব থেকে ১২ ঘণ্টা পর পর্যন্ত। সাধারণত গোড়ার দিকের গিঁটে যেসব ফল ধরে সেসব ফল থেকে ফলন বেশি হয়। চালকুমড়ার হাইব্রিড বীজ উৎপাদনের জন্য মাতৃ ইনব্রিড লাইনের স্ত্রী ও পুরুষ গাছ ৪ঃ১ অনুপাতে লাগাতে হবে। খাড়া দেয়ালের মতো মাচা করে তাতে বা জালে গাছ লতিয়ে দিতে হবে। ফুল ফোটার আগে প্রতিটি স্ত্রী ও পুরুষ ফুল ব্যাগিং করে ঢেকে দিতে হবে। স্ত্রী ফুলে কাক্সিক্ষত পরাগরেণু দিয়ে পরাগায়ন ঘটানোর পর পুনরায় ব্যাগিং করে দুদিন রেখে দিতে হবে। ইনব্রিড জাতের ওপর নির্ভর করে বীজ বপনের ৭০ থেকে ৯০ দিন পর পাকা চালকুমড়া সংগ্রহ করতে হবে। পাকা চালকুমড়া গাছ থেকে তুলে কেটে তার ভেতর থেকে সুপুষ্ট বীজ সংগ্রহ করে পানিতে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর বীজ শুকাতে হবে। বদ্ধ পলিপ্যাকেটে নিম্ন  তাপমাত্রায় বীজ সংরক্ষণ করতে হবে।

 

লাউয়ের হাইব্রিড বীজ উৎপাদন
লাউয়ের হাইব্রিড বীজ উৎপাদনের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো, লাউ যেন গরমকালেও ধরে, গাছ খাটো হয়, যেন লাউয়ের মাচা তৈরির খরচ বেঁচে যায়, ফলন যেন বেশি হয়, গাছ ও লাউয়ের বৃদ্ধি যেন চমৎকার ও আকর্ষণীয় হয়।  লাউয়ের হাইব্রিড বীজ উৎপাদন করতে হলে প্রথমে ফুলের কিছু চরিত্র সম্পর্কে জানতে হবে। লাউয়ের ফুল সাধারণ ভোর ৫টা থেকে ৮টার মধ্যে ফোটে। এ সময়ের মধ্যে হাইব্রিডাইজেশনের কাজ করা উত্তম। তবে পরাগরেণুর বিদারণ ও গর্ভমু-ের পরাগগ্রহীতা ফুল ফোটার পর ১৮-২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত বজায় থাকে। এ সময়ের মধ্যেও এ কাজ করা যেতে পারে। কিন্তু ফুল ফোটার পর পরাগরেণু বিদারিত হলে সেই সতেজ পরাগরেণু দিয়ে হাইব্রিডাইজেশন করা উত্তম। হাইব্রিডাইজেশনের জন্য কাক্সিক্ষত বৈশিষ্ট্যের ইনব্রিড লাইন সৃষ্টি করতে হবে। এজন্য ঈপ্সিত বৈশিষ্ট্য রয়েছে এমন বৈশিষ্ট্যের লাউ গাছ জন্মাতে হবে। সেই গাছে ফুল ফোটার আগেই স্ত্রী ও পুরুষ ফুল আলাদাভাবে ব্যাগিং করতে হবে। ফুল ফোটার পর পরাগরেণুর বিদারণকালে সেই সতেজ পরাগরেণু দিয়ে স্ত্রী ফুলে প্রজনন ঘটিয়ে স্ত্রী ফুলে আবার ব্যাগিং করতে হবে। এভাবে ব্যাগিং করে ২-৩ দিন রেখে দিতে হবে। এতে স্ত্রী ফুলে অন্য পরাগযোগ হবে না। এ ফুল থেকে গঠিত ফলের বীজ দিয়ে ৪-৫ মৌসুমে লাউ চাষ করতে হবে। চাষের সময় কাক্সিক্ষত বৈশিষ্ট্যের গাছ ও ফল রেখে দুর্বল বৈশিষ্ট্যের গাছ ও ফল বাদ দিতে হবে। এভাবে ইনব্রিড লাইনের পুরুষ ও স্ত্রী মাতৃ গাছ সৃষ্টি হবে।


এবার ৪:১ অনুপাতে জমিতে স্ত্রী ও পলিনেটর পুরুষ ইনব্রিড গাছ লাগাতে হবে। ফুল ফোটার আগে তথা পরাগরেণু উন্মুক্ত হওয়ার আগেই স্ত্রী ও পুরুষ ফুল ব্যাগিং করতে হবে। সাধারণত ফুল ফোটার ২ দিন আগে ব্যাগ দিয়ে স্ত্রী ফুল ও পুরুষ ফুল ঢেকে রাখা হয়।  ফুল ফোটার পর সতর্কতার সাথে পরাগায়ন ঘটিয়ে স্ত্রী ফুল আরও ২ দিন ব্যাগিং করে ঢেকে রাখতে হয়। এ ফুল থেকে ফল গঠিত হয় ও ধীরে ধীরে তা বড়ো হতে থাকে। গাছ মারা যাওয়ার পর পাকা ফল তুলে তার ভেতর থেকে হাইব্রিড বীজ সংগ্রহ করা হয়। বীজ ভালো করে ধুয়ে শুকানো হয়। শুষ্ক হাইব্রিড বীজ পলিথিনের প্যাকেটে বদ্ধ করে নিম্ন তাপমাত্রায় মজুদ করতে হয়।


হাইব্রিড বীজের অনেক দাম। সাধারণ কৃষকের পক্ষে তা উৎপাদন করা সম্ভব নয়। কেননা হাইব্রিড বীজ উৎপাদনের কাজটা খুব সহজ নয়। কিন্তু এ কাজে প্রশিক্ষিত কৃষক বা প্রতিষ্ঠান হাইব্রিড বীজ উৎপাদন করতে পারে।

 

মৃত্যুঞ্জয় রায়*

*উপপ্রকল্প পরিচালক, আইএফএমসি প্রকল্প, ডিএই, খামারবাড়ি, ঢাকা


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon